পাসপোর্ট কি | লাল নীল সবুজ Passport | বাংলাদেশী পাসপোর্ট ইতিহাস

পাসপোর্ট কি | লাল নীল সবুজ Passport | বাংলাদেশী পাসপোর্ট ইতিহাস | হাতে লেখা, MRP থেকে E Passport

Passport আন্তর্জাতিক ভ্রমনের ক্ষেত্রে বাহকের পরিচয় এবং জাতীয়তা প্রকাশ করে। প্রতিটি দেশ তাদের নাগরিকের সুবিধার জন্য পাসপোর্ট ইস্যু করে। পাসপোর্টে একজন ব্যাক্তির নাম, জন্ম তারিখ, ছবি, স্বাক্ষর সহ কিছু তথ্য প্রকাশ করা হয় যাতে পাসপোর্টধারী ব্যাক্তি সম্পর্কে জানা যায়।

Passport Bangladesh
চিত্রঃ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ইতিহাস ও লাল নীল সবুজ রঙের পাসপোর্ট

পাসপোর্ট কি?

পাসপোর্ট হল কোন দেশের সরকার প্রদত্ত একধরনের ভ্রমণ নথি বা ডকুমেন্ট। যা পাসপোর্টধারী ব্যাক্তির পরিচয় বহন করে। পাসপোর্ট কে অনেক গুলো নথির সমষ্টিও বলা হয়। প্রতিটি দেশে তাদের দেশের জনগণের জন্য নির্দিষ্ট আইনের মাধ্যমে পাসপোর্ট ইস্যু করে, যাতে ভ্রমণ, ব্যাবসা, শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে অন্য দেশে যাতায়াত করতে পারে।


পৃথিবীতে পাসপোর্ট এর ধারণা কি ভাবে এলোঃ

পৃথিবীর প্রাচীন গ্রন্থ বিশ্লেষণ করলে প্রথম পাসপোর্ট সম্পর্কিত ধারণা পাওয়া যায় ৪৫০ খ্রিষ্টাব্দে হিব্রু বাইবেলের নেহেমিয়া ২ঃ৭-৯ তে। King Artaxerxes 1 তার এক কর্মচারীকে একটি চিঠি লিখে দেন নদীর অন্য পাশে অন্য এক রাজার রাজ্য পরিদর্শনের অনুমতি দিয়ে এবং ঐ রাজা কেও চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন তার কর্মচারির ভ্রমনে কোন অসুবিধা যেন না হয়।

চাণক্যের অর্থশাস্ত্রে ৩৪ অধ্যেয়ে উল্লেখ আছে, গ্রাম প্রধান অথবা রাজার অনুমতি বিহীন কেউ গ্রামে বা রাজ্যে ঢুকতে পারতেন না। চিনের কিন রাজবংশ সহ ইউরোপে এমন নিয়মের প্রচলন দেখা যায়। 

মধ্যযুগীয় ইসলামী খিলাফতে যাকাত এবং জিজিয়ে কর এর ডকুমেন্ট ব্যাবহার করে খিলাফতের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সুযোগ ছিল।

মূলত এই ভাবেই আদি পাসপোর্ট এর উৎপত্তি হয়। যা রাজা, গ্রাম প্রধান, গোষ্টি প্রধানের অনুমতি পত্রই পাসপোর্ট এর কাজ করত।


বাংলাদেশী পাসপোর্ট এর ইতিহাসঃ

বাংলাদেশে প্রথম পাসপোর্ট চালু হয় ১৯৭৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আইন করে  বাংলাদেশে প্রথম পাসপোর্ট চালু হয়। ১৯৭৩ এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩ ধরনের পাসপোর্ট চালু হয়েছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে।


হাতে লেখা পাসপোর্ট / Handwritten Passport Bangladesh

হাতে লেখা পাসপোর্ট হল এমন সব পাসপোর্ট যার সকল তথ্যই হাতে লেখা হতো। ব্যাক্তির নাম ঠিকানা এমন কি ছবিও হাত দিয়ে লাগিয়ে স্বচ্ছ কস্টেপ লাগিয়ে রাখা হতো।

০৮/০২/১৯৭৩ সালে প্রথম হাতে লেখা পাসপোর্ট চালু হয় বাংলাদেশে। তখনের সময়ে অন্য সকল দেশে হাতে লেখা পাসপোর্টের প্রচলন ছিল। তখনকার আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে এই পাসপোর্ট বৈধ ছিল।


Machine readable passport / MRP পাসপোর্ট

মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর অর্থ হল যন্ত্রে পাঠ যোগ্য পাসপোর্ট এবং পাসপোর্ট এ থাকা সকল তথ্য প্রিন্টারের মাধ্যমে প্রিন্ট করা। পাসপোর্ট অফিসে আবেদনকারীর ছবি তুলে এবং ২ হাতের ৪ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়। 

১ এপ্রিল ২০১০ তারিখে বাংলাদেশে Machine readable passport বা এমআরপি পাসপোর্ট চালু করে। Passport MRP চালু হলেও ২০১৫ সাল পর্যন্ত হাতে লেখা পাসপোর্টের ব্যাবহার ছিল। বর্তমানে সেটা বাতিল হয়েছে। এই মুহুর্তে MRP Passport চালু আছে আর কিছুদিন পরে হয়তো বাংলাদেশ সরকার MRP বন্ধ করে দেবে। এখন যে কেউ ইচ্ছা করলে MRP Passport to E Passport করতে পারছে। 

E Passport / Biometric Passport - ই পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট কি?

ই পাসপোর্ট বা বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট হল মাইক্রোপ্রসেসর চিপ যুক্ত বিশেষ পাসপোর্ট যাতে কোন ব্যাক্তির যাবতীয় ডকুমেন্ট সহ মুখের ছবি, আঙ্গুলের ছাপ, চোখের রিটিনা বা আইরিশ স্ক্যান ৩২ লিলোবাইটের মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকে। যা নকল করা ব্যায়বহুল এবং কষ্টসাধ্য প্রসেস। এখনো শোনা যায়নি কারো ই পাসপোর্ট নকল হয়েছে। 

আগামীর বিশ্ব যোগাযোগ বিষয়ে যে উন্নতি করতে যাচ্ছে তার জন্য বাংলাদশ সরকার আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে ePassport চালু করেছে।

বাংলাদেশে ই পাসপোর্ট চালু হয় ২২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম ই পাসপোর্ট চালু করে। E Passport চালুর দিক থাকে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বের মধ্যে ১১৯ তম। 

 বাংলাদেশ সরকারের ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তর ই পাসপোর্ট অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করে এবং ই পাসপোর্ট স্ট্যাটাস দেখার ব্যাবস্থা করে রেখেছে।

বাংলাদেশী পাসপোর্ট কত ধরনের?

বাংলাদেশ সরকার  ৩ রঙের ৩ ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করে বাংলাদেশীদের জন্য। লাল পাসপোর্ট, নীল পাসপোর্ট, সবুজ পাসপোর্ট এই তিন রঙের পাসপোর্ট পেয়ে ভ্রমন সহ ডিপ্লোমেটিক কাজের জন্য। 


Diplomatic Passport - লাল পাসপোর্ট কি?

ডিপ্লোমেটিক্স পাসপোর্ট, লাল পাসপোর্ট, কূটনৈতিক পাসপোর্ট, Type- D Passport আমরা যে নামেই ডাকি না কেন এটি বাংলাদেশের ৩ ধরনের পাসপোর্টের মধ্যে ১ম শ্রেণীর পাসপোর্ট। পাসপোর্ট এর কভার পেজ টি লাল মলাটের হয়।

লাল পাসপোর্ট কারা পায়

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীসভার সদস্য, MP এবং এদের স্বামী, স্ত্রী, সন্তানেরা।

একই সাথে উচ্চতর আদালতের বিচারপতিগণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যলয়ের উপচার্যগণ, মন্ত্রণালয়ের সচিবগণ, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনের কর্মরত কর্মকর্তাগণ এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর প্রধান।

লাল পাসপোর্ট এর সুবিধা কিঃ   

লাল পাসপোর্ট যাদের কাছে থাকে তাদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য কোন ভিসার প্রয়োজন হয় না। তারা যে দেশে যেতে চায় সেই দেশের আকাশ, নৌ, স্থল যে পোর্টে পৌঁছানোর পরে অন-অ্যারাইভাল ভিসা পেয়ে থাকেন। 


Official Passport - নীল পাসপোর্ট কি?


নীল পাসপোর্ট, Official Passport অথবা Type- S Passport আমরা যে কোন নামেই ডাকতে পারি। Type s অর্থ S= Service । 

নীল পাসপোর্ট কারা পায়

নীল পাসপোর্ট বা Official Passport পেয়ে থাকে সরকারী চাকরী করেন এমন কর্মচারী কর্মকর্তাগণ। দেশের বাইরে সরকারী কাজে ভ্রমনে গেলে তারা এই পাসপোর্ট ব্যাবহার করতে পারবেন। এই পাসপোর্ট এর মলাট নীল রঙের হয়। বাংলাদেশ সরকার তার সকল কর্মচারীর জন্য অফিসিয়াল পাসপোর্ট ইস্যু করে। নীল পাসপোর্ট  পেতে হলে অবশ্যই অফিসের অনুমতি বা গভর্নমেন্ট অডার / GO নিতে হয়।  

নীল পাসপোর্ট এর সুবিধাঃ

 নীল পাসপোর্টধারী ব্যাক্তি ৩০ টির বেশী দেশে বিনা ভিসায় প্রমণ করতে পারেন। সরকারী কাজ ছাড়া এই পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করা যায় না। 


Ordinary Passport - সবুজ পাসপোর্ট কি?


বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের জন্য প্রচলিত সবুজ রঙের পাসপোর্ট কে Ordinary Passport, সাধারণ পাসপোর্ট এবং Type- P Passport বলা হয়।

সাধারণ পাসপোর্ট বা সবুজ পাসপোর্ট কারা পায়ঃ

সবুজ / অর্ডিনারি / সাধারণ পাসপোর্ট পেয়ে থাকে দেশের সাধারণ নাগরিক এবং সরকারী কর্মচারীগণ। জন্মসূত্র, বৈবাহিক সূত্রে এবং বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছে এমন বাংলাদেশী নাগরিকদের অর্ডিনারি বা সবুজ বা সাধারণ পাসপোর্ট দেওয়া হয়।

সবুজ পাসপোর্ট এর সুবিধাঃ

একমাত্র ইসরাইল ব্যাতিত পৃথিবীর সকল দেশে এই পাসপোর্ট বৈধ। এই পাসপোর্ট যাদের থাকে তারা কোন দেশে যেতে হলে উক্ত দেশহ থেকে ভিসা নিতে হয়।


বর্তমানে ই পাসপোর্ট ডেলিভারি সময় এবং খরচের উপর নির্ভর করে আলাদা ৩ ভাবে প্রদান করা হচ্ছে। এই ৩ ভাবের পাসপোর্টের মধ্যে শুধু মাত্র সময়, টাকার পরিমাণ, পাসপোর্টের পৃষ্ঠার পার্থক্য। বাংলাদেশের সকল আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস পাসপোর্ট থেকে সাধারণ পাসপোর্ট / Regular Delivery , জরুরী পাসপোর্ট / Express Delivery এবং অতীবজরুরী পাসপোর্ট / Super Express Delivery প্রদান করা হচ্ছে। 

রেগুলার পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায়? 

Regular Delivery পাওয়া যায় ১৫ থেকে ২১ দিনে। সরকারী ছুটি অথবা তথ্যে ভুল থাকলে পাসপোর্ট পেতে দেরী হতে পারে।


জরুরী পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায়?

বায়োমেটিক এনরোলমেন্ট এর দিন থেকে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে।


অতীবজরুরী পাসপোর্ট কত দিনে পাওয়া যায়?

সুপার এক্সপ্রেস পাসপোর্ট ২ দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। তবে এই পাসপোর্ট শুধু মাত্র আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করে নিতে হয়।

পাসপোর্ট কি, পাসপোর্ট এর উৎপত্তি, লাল পাসপোর্ট, নীল পাসপোর্ট, সবুজ পাসপোর্ট এবং পাসপোর্টের সুবিধা কে কোন পাসপোর্ট পাবে সব কিছু আলোচনা করা হল। যদি পাসপোর্ট সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে তা নিচে কমেন্টে করতে পারেন। আমরা আপনার পাসপোর্ট সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর দিব।

💢 আপনার মূল্যবান সময়ের জন্য ধন্যবাদ 💢

ePassport-bd.com

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন